নিত্যপণ্যের বাজার আবার অস্থির হয়ে উঠেছে। আর এর জন্য ব্যবসায়ীদের অজুহাতের কোনো অভাব হচ্ছে না। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়। ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি দেশি আদা বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৫০ টাকায়। বড় আলু কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৩৭ থেকে ৪০ টাকায়। রসুন ১০ থেকে ৩০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকায়। সরকার খোলা চিনির দাম ১০৪ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়। প্যাকেটজাত চিনি বাজারে পাওয়া যাচ্ছে কম। পেলেও দাম আরো বেশি। বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন গত বৃহস্পতিবার প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১২ টাকা বাড়িয়েছে। বেড়েছে প্রায় প্রতিটি সবজির দাম।
বাজারে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির জন্য ব্যবসায়ীরা যেসব যুক্তি দেখান তার বেশির ভাগই মানতে নারাজ ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করেন এমন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, ব্যবসায়ীরা অত্যধিক মুনাফার জন্য বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেন। নিজেদের অপকর্ম ঢাকতে তাঁরা অযৌক্তিক অজুহাত দিতে থাকেন। তাঁদের মতে, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম সামান্য বাড়লে এখানে লাফ দিয়ে দাম বাড়ে, আর আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলেও এখানে দাম কমে না। বাজার স্থিতিশীল করার লক্ষ্যে সরকার শুল্কছাড় দিলে বা কমিয়ে দিলেও ভোক্তারা তার সুবিধা পায় না বললেই চলে। প্রায় পুরো সুবিধাটাই নেন ব্যবসায়ীরা, তাঁদের মুনাফার অঙ্ক বাড়তে থাকে। আর সরকারের তদারকি বা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার দুর্বলতাও বাজারে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির একটি বড় কারণ। পেঁয়াজ, রসুন, আদার আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, ডলার সংকটের কারণে ব্যাংকগুলো ঠিকমতো এলসি দিচ্ছে না। আমদানি ব্যাহত হওয়ায় দাম বাড়ছে। কিন্তু আলুর দাম বাড়ছে কেন? ডিমের দাম বাড়ছে কেন? এগুলো তো আমদানি করা হয় না। ৮০ শতাংশ পেঁয়াজ দেশেই উৎপন্ন হয়। মাত্র ২০ শতাংশ আমদানি করতে হয়। এতেই কি পেঁয়াজের বাজার এত অস্থিতিশীল হয়ে পড়ছে? সরকার চিনির ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে এবং তাঁদের জন্য যুক্তিগ্রাহ্য মুনাফা রেখেই চিনির দাম নির্ধারণ করেছিল। কিন্তু বাজারে চিনির সংকট হয়ে গেল এবং কেজিপ্রতি ৩৬ টাকা বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। কেন?
বর্তমানে সাধারণ মানুষ বা ভোক্তাদের অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। তাদের স্বার্থ রক্ষা করার দায়িত্ব সরকারের। কিন্তু সরকার সেই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে পারছে না। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারের ওপর সরকারের কার্যকর কোনো নিয়ন্ত্রণই নেই। টিসিবি অতি সীমিত পরিসরে নিত্যপ্রয়োজনীয় কয়েকটি পণ্য বিক্রি করলেও বাজারে তার কোনো প্রভাবই পড়ে না। বাজার থেকে হঠাৎ করে কোনো পণ্য উধাও হয়ে যাওয়ার প্রকৃত কারণ কখনো খুঁজে দেখা হয় না। মজুদদারি, সিন্ডিকেটবাজির বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থাই নেওয়া হচ্ছে না। আমরা মনে করি, বাজার নিয়ন্ত্রণে এবং মূল্য স্থিতিশীল রাখতে সরকারের সর্বোচ্চ উদ্যোগ জরুরি।